বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের বক্তব্যে সাম্প্রতিক কালে কী ধরনের সহিংসতা বেড়েছে, তা এসেছে। এ কথা সত্য যে সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে-কমে। একটি পত্রিকায় দেখেছি, কীভাবে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে। পরিসংখ্যানে এসেছে যে ৭০ শতাংশ ডিভোর্স নারীরা দিয়েছেন। এর কারণও অনুসন্ধান করার প্রয়োজন আছে।’
ভবিষ্যতে সারা দেশের লিগ্যাল এইডের কর্মপরিচালনার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
চিকিৎসার সাপোর্ট বিরাট লিগ্যাল এইড
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি লিগ্যাল এইড সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধি করার চিন্তাভাবনা করতে হবে, যেমন সমাজে স্বামী পরিত্যক্তা আছেন। ধর্ষণ ছাড়া অন্যান্য নির্যাতিত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই চিকিৎসার সাপোর্ট দেওয়া কিন্তু বিরাট লিগ্যাল এইড। এখানে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে মনে হয়। এই সাপোর্টগুলো না দেওয়ার কারণে দেখা যায়, অনেক সময় সাক্ষ্য নষ্ট হয়ে যায় ও ভিকটিম নানাভাবে বিভ্রান্তিতে পড়ে। সুতরাং এই বিষয়গুলো ধীরে ধীরে লিগ্যাল এইডে এনে পর্যায়ক্রমে পরিধি বাড়াতে হবে।’
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আইনি সহায়তা দিতে বিশেষ দক্ষতা লাগে
সরকারি আইনি সহায়তা বিষয়ে জনসচেতনতা ও প্রচারের ওপর জোর দিয়ে বিচারপতি বলেন, পরিষেবা বাড়াতে হলে উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রমকে আরেকটু গতিশীল করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের আইনি সহায়তায় প্যানেল আইনজীবীদের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা প্রয়োজন। কেননা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ডিল করা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
৪ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ২ হাজার ৬৬ জনকে আইনি পরামর্শ দিয়েছি। ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৭ জনকে মামলায় সহায়তা করা হয়েছে। ৪৯ হাজার ৯২৭ জনকে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি সেবা দেওয়া হয়েছে। হটলাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৮টি। মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮ জনকে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
সংস্থার পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা মূলত বিচারিক কর্মকর্তা। নানাবিধ সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাঁরা উঠান বৈঠক, স্কুল ও কলেজে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠান করছেন।
একজন নারী যখন ডিভোর্স দেন, তাঁর আর কোনো উপায় থাকে না
সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘ভালো যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই। বারবার এটাই উঠে এসেছে যে আইনি সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে কীভাবে প্রচার ও মানুষের সচেতনতা বাড়ানো যায়।
করোনাকালীন মানুষের জীবনে নানা সংকট আর্থিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত; তারপরে সহিংসতা। সবাই এক কথা বলছি যে এই লিগ্যাল এইড সার্ভিস প্রান্তিক ও দুস্থ মানুষের জন্য বিশেষ করে দুস্থ ও পরিত্যক্তা নারীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর পরিধি আরও কীভাবে বাড়াতে ও কার্যকর করতে পারি, সবাইকে তা নিয়ে চিন্তা ও কাজ করতে হবে।’
নারীর ডিভোর্স দেওয়ার হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শাহীন আনাম বলেন, ‘একজন নারী যখন ডিভোর্স দেন, তখন অনেক অসহায় অবস্থায় দেন। তাঁর আর কোনো উপায় থাকে না। কারণ, তিনিসহ সবাই জানি, সমাজে একজন ডিভোর্সড নারীর অবস্থান ও যে রকম কথা তাঁকে শুনতে হয়। অসহায় হয়ে যান। এ সত্ত্বেও যখন ডিভোর্স চান, তখন আমাদের খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে, কেন ডিভোর্সের হার বাড়ছে? এখানে অনেক বিষয় আছে। সামাজিক মূল্যবোধের বিষয় আছে, সহিংসতা বাড়ছে। নানা রকম অবক্ষয় ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার।’
৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ শিশু সহিংসতার শিকার
অনুষ্ঠানের শুরুতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়কারী রুমা সুলতানা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচির অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ। ২০২০ সালে কোভিড শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশে এই অবস্থা পর্যবেক্ষণে ফাউন্ডেশন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা পর্যবেক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য মুঠোফোনে জরিপ করে। ৫৩ জেলায় গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৫ হাজার মানুষের মধ্যে এই জরিপ কার্যক্রম চলে। এই জরিপে দেখা যায়, ৪৮ হাজার ২৩৩ জন নারী ও শিশু পারিবারিক ও অন্যান্য ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
রুমা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ১৯টি জেলার জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা কর্মশালায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে নেত্রকোনো জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা মো. মহিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা কুদরাত-ই-খোদা, কুমিল্লা জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ফারহানা লোকমান, বান্দরবান জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা আবুল মনসুর সিদ্দিকী, লক্ষীপুর জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফাহদ বিন আমিন চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ফারাহ মামুন ও ময়মনসিংহের জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা রওশন আরা রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
/www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A8>